সুচিত্রা সেন (এপ্রিল ৬, ১৯৩১ – জানুয়ারী ১৭, ২০১৪)
সুচিত্রা সেন (এপ্রিল ৬, ১৯৩১ – জানুয়ারী ১৭, ২০১৪)
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন :
সুচিত্রা সেন বাংলাদেশের পাবনার এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে এপ্রিল ৬, ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত এব মায়ের নাম ইন্দিরা দাশগুপ্ত। যদিও তিনি আজ সুচিত্রা সেন নামে পরিচিত কিন্তু শৈশবে তার নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। রমা ছিলেন সংসারের পঞ্চম সন্তান এবং তৃতীয় কন্যা। ১৯৪৭ সনে কলকাতায় গিয়েই বিয়ে হয়ে যায় দিবানাথ সেনের সাথে। শ্বশুরবাড়ি থেকেই তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘সেন’ উপাধি। রমা দাশগুপ্ত হয়ে যান রমা সেন।
ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেত্রী । বিশেষ করে উত্তম কুমারের সাথে অভিনয়ের কারনে তিনি সারা বাংলায় প্রচন্ড জনপ্রিয় হন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি আজও বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ জুটি হিসেবে পরিগনিত। বর্তমানে তিনি নিভৃত জীবনযাপন করেন। যখন তিনি অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন সে পর্যায়ে তিনি ধীরে ধীরে সেরা নায়িকার অবস্থান হারাচ্ছিলেন বলে কথিত আছে।
তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার – সাত পাকে বাঁধা ১৯৬৩ ছবির জন্য, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব)।
১৯৩১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্ত পরে সুচিত্রা নাম নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রীতে পরিণত হন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো আজও বাঙালির হৃদয়ে অমলিম।
সুচিত্রা অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দ্বীপ জেলে যাই, সবার ওপরে, সাড়ে চুয়াত্তর, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত ইত্যাদি। হিন্দি চলচ্চিত্র আাঁধিতে তার অভিনয়ও প্রশংসনীয়।
শিল্পপতির ছেলে দীবানাথ সেনকে বিয়ে করেন সুচিত্রা, মুনমুন তাদের একমাত্র সন্তান।
১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামে চিলচ্চিত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রুপালী জগতের যাত্রা শুরু হয় সুচিত্রা সেনের। হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
‘দেবদাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৫৫ সালে জাতীয় পুরষ্কারও অর্জন করেন তিনি। ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে এসে ‘আন্ধি’ ছবিতে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেন সুচিত্রা।
‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে’ সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান তিনি। আর এই সম্মানের মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত হন সুচিত্রা সেন।
১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেন সর্বকালের জনপ্রিয় এই নায়িকা। এরপর আকস্মিকভাবেই জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।
২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি তিনি। ফলে তাকে আর পুরস্কারটি দেয়া হয়নি।
কলকাতায় তিনি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানে মেয়ে ও দুই নাতনি রিয়া সেন ও রাইমা সেন ছাড়া মাত্র গুটিকয়েক পারিবারিক বন্ধুরই প্রবেশাধিকার রয়েছে।
চলচ্চিত্রের তালিকা
সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)
ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪)
অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪)
শাপমোচন (১৯৫৫)
সবার উপরে (১৯৫৫)
সাগরিকা (১৯৫৬)
পথে হল দেরি (১৯৫৭)
হারানো সুর (১৯৫৭)
দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯)
সপ্তপদী (১৯৬১)
বিপাশা (১৯৬২)
চাওয়া-পাওয়া
সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), এজন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন
হসপিটাল
শিল্পী (১৯৬৫)
ইন্দ্রাণী (১৯৫৮)
রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮)
সূর্য তোরণ (১৯৫৮)
উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩) (হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে)
গৃহদাহ (১৯৬৭)
ফরিয়াদ
দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪)
দত্তা (১৯৭৬)
প্রণয় পাশা
প্রিয় বান্ধবী
মৃত্যু:
জানুয়ারি ১৭, ২০১৪ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
Comments